সারাদেশে ৬০ হাজার জাল সনদে চাকরি করছেন ভূয়া শিক্ষকরা
সারাদেশে ৬০ হাজার জাল সনদে চাকরি করছেন ভুয়া শিক্ষকরা
সারাদেশে ৬০ হাজার শিক্ষক জাল সনদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক ফোরাম এই অভিযোগ করেছে।
গত ৪/০৩/২০২৪ সোমবার সকালে এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন থেকে এই অভিযোগ করা হয়।
তাদের দাবি, ‘আমাদের রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে এনটিআরসিএ ৬০ হাজার জাল সনদ দিয়েছেন। তাদের আবার এমপিওভুক্ত করেছেন। জাল সনদধারীরা বহাল তবিয়তেই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখায় এখনো শিক্ষকতা করছেন। অথচ বৈধ সনদ থাকার পরও আমাদের নিয়োগবঞ্চিত করে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এনটিআরসিএ। জাল সনদধারীদের চিহ্নিত করার পরও তাদের চাকরিচ্যুত করা হলো না কেন? আমাদের নিয়োগ এখনো দেওয়া হয়নি কেন?’
তারা মনে করছেন, এর কারণ একটাই তাদের দুর্নীতি ধরা পড়বে। জাল সনদের এমপিও বাতিল হবে। এই জন্যই তারা দেয়নি।
৬০ হাজার শিক্ষক জাল সনদে চাকরি করছে এমন অভিযোগের বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ‘এটি কী করে সম্ভব। আমার কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। এটা গাঁজাখুরি অভিযোগ।’
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন অভিযোগ প্রতি মাসে আমাদের কাছে ১০টার মতো আসে। আমরা চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলি। পরবর্তীতে আইন কী করবে সেটা আমরা বলতে পারব না।’
সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ার পরও তারা চাকরি করে যাচ্ছে এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। এটা আইন বুঝবে। চাকরিদাতা তো আর আমরা না। আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারি। প্রতিষ্ঠান যদি আমাদের সুপারিশ গ্রহণ না করে সেটা তাদের বিষয়।’
এদিকে নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক ফোরাম সোমবার সকাল থেকে এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন মূলত প্রথম থেকে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ বাতিল নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবরকে কেন্দ্র করে।
তাদের দাবি, এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান মন্তব্য করেছেন, ১-১৫তম পরীক্ষার মাধ্যমে যারা সনদ পেয়েছেন সেই সনদ বাতিল ও অকার্যকর এবং তাদের আর আবেদনের সুযোগ থাকবে না। কিন্তু মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এনটিআরসিএ’র কাছ থেকে সনদ লাভ করেন তারা। ফলে অর্জিত সনদ বাতিল ও অকার্যকর করার ক্ষমতা কেউ রাখে না।
তারা আরও বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭তমদের তিন বছরমেয়াদি সনদ থাকলেও ১ থেকে ১২তমদের সনদের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ ছিল না।” আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘৫৪/২০২২ রিভিউ রায় এখনো ১ থেকে ১২তমদের পক্ষে এবং এই রায়ে বলা হয়েছে, ১২/০৬/২০১৮ সালে এমপিও নীতিমালার আগে যারা সনদ লাভ করেছে তাদের জন্য বয়স শিথিলযোগ্য। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১২ জুনের এমপিও নীতিমালার আগে যারা সনদ লাভ করেছে তাদের জন্য বয়স শিথিলযোগ্য। তাই এনটিআরসিএ সচিবের এই মন্তব্যের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের মন্তব্য আমাদেরকে মর্মাহত করার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। আমরা অসহায় এবং নিরুপায় হয়ে পড়েছি। এনটিআরসিএ প্রতিনিয়তই আমাদের সঙ্গে প্রহসন করে চলেছে।’
এদিকে আন্দোলনের এক পর্যায়ে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এক থেকে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ বাতিলের খবর সম্পূর্ণ গুজব। গুজব এমন একটি ভয়ানক জিনিস যা আপনারা ফেসবুকে দেখেছেন, যেটা সঠিক নয়। তাই গুজবে কান দেবেন না।’
তবে এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ে সচিব ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সুরাহা করতে চলতি মাসের ১২ তারিখ এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান প্রধান বিচারপতির কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিবন্ধনে টিকেছে এটা তাদের অপরাধ নয়। তাদের চাকরি দিতেই আমরা এই দায়িত্বে রয়েছি। তাদের আন্দোলনের খবর শুনে জরুরি মিটিং না করেই তাদের কাছে গিয়েছি, বুঝিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো সুরাহার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে যাব চলতি মাসের ১২ তারিখ।’
শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহনের বেশ কয়েক দিন পর বলেছিলেন সারাদেশে শিক্ষক সংকট দূর করতে প্রয়োজননে বছরে তিনবার গনবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে,শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ১-১২তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা আশায় বুক বেঁধেছেন।তাদের প্রত্যাশা তাদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে যেন নতুন নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হয়।
What's Your Reaction?