জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
মাওলানা মোঃ আনোয়ার উল্লাহ (শরিফ)
মু'মিনদের জন্য ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌসুম থাকে। যার মাধ্যমে সে অল্প আমলই অনেক সওয়াব অর্জন করতে পারে। যেমনটি মাসের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান মাস এবং দিনের মধ্যে সবচাইতে উত্তম দিন হলো আরাফার দিন। ঠিক তেমনি সপ্তাহের মধ্যে সবচাইতে উত্তম দিন হলো শুক্রবার দিন যা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ঈদের দিন। আর ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনটির অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন এ দিনকে অন্যান্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন"হে মু'মিনগণ! জুমার দিনে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটা তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি করো।" (সূরা জুমুআ : ০৯)।
এছাড়াও হাদীস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমার দিন তোমাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাত ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমার আগের রাত্রিটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পূর্ববর্তী রাতে বনি আদমের সমস্ত আমল মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। (বুখারি, আহমদ)।
জুমার দিনের আদব : জুমা মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এ দিনের অনেক ফজিলত ও গুরুত্বের কথা হাদিসে এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এটা শুক্রবার, যে দিনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের পূর্ববর্তী জাতি থেকে পৃথক করেছেন। ইহুদিদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন ছিল শনিবার, খ্রিস্টানদের জন্য ছিল রোববার। যখন আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রেরণ করলেন, তখন শুক্রবারকে জুমার দিন হিসেবে পালন করতে নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৯৭)।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইউসুফ (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মত গোসল করে সালাতের জন্য আগমণ করে, সে যেন একটি উট কোরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমণ করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে আগমণ করে, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমণ করে সে যেন একটি মুরগী কোরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমণ করল সে যেন একটি ডিম কোরবানী করল।ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।
ইসলামি শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এই দিন মানব জাতির আদি পিতা- হজরত আদম (আ.) এর দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে। জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় (মুসলিম শরীফ)
জুম্মার দিন বিশেষ মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো- এ দিনে বিশেষ একটি বরকতময় সময় আছে, বান্দা তখন তার কল্যাণের জন্য যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) হযরত জিব্রাইল আলাই সাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, জুম্মার দিনে আমাদের জন্য কী আছে? হজরত জিবরাইল আমিন বললেন, এতে এমন এক সময় রয়েছে, সে সময় কেউ নিজের কোনো নেক মাকসুদ পূরণের জন্য দোয়া করলে তা নিঃসন্দেহে কবুল হয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, চতুর্থ খ-, ১৫৫-নং পৃষ্ঠা)।
নবী কারীম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে, একটি নুর তার পা থেকে আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। হাশরের দিনে এ নুর তার জন্য আলো হবে। এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস : ২১২৫)।
হযরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহ শুনবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কার তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস: ৫০২; মুসলিম, হাদিস: ১৯৯৯)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী কারীম (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কিছু প্রার্থনা করে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৫১; আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১০২৩৪)।
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে অনেকগুলো মতামত পাওয়া যায়। তমধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনের কাক্সিক্ষত সময় হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।’ (মুসনাদে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৪৬০; তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৯)। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ও আম্মানাওয়ালুহু উক্ত বিষয়ের উপর বুঝে শুনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহ জুমার দিনের সকল কার্য সমাপ্ত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিশেষ প্রতিনিধি/জনগণের কণ্ঠ.কম
What's Your Reaction?