আদর্শ মানুষের পরিচয় ফোটে তার উত্তম চরিত্রে

Sep 22, 2024 - 21:27
 0  6
আদর্শ মানুষের পরিচয় ফোটে তার উত্তম চরিত্রে

মাসুম আলভী

পৃথিবীতে মানুষ একমাত্র প্রাণী যার বিবেক শক্তি আছে। যার মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ভালো মন্দ দু'টি বিষয়ে স্বাধীনতা দিয়েছেন। ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে মন্দ স্বভাবগুলো নিবৃত্ত করা যায় আবার ইচ্ছা শক্তির স্বাধীনতা ভোগ করে জন্তু-জানোয়ার চেয়ে হিংস্র পরিগণিত হয় মানুষ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বুঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল।'  আল্লাহ তায়ালা সুন্দর আচরণের জন্য কুরআন ও হাদিসের মধ্যে তাগিদ দিয়েছেন এবং রাসূল (সা.) কে উত্তম আচরণের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের দিকে আহ্বানের নির্দেশ দেন। 

জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ পতনের অন্যতম কারণ হলো অল্পতে রেগে যাওয়া। সামান্য বিষয়ে স্ত্রী, সন্তানদের গালাগাল ও গায়ে হাত তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করে না, জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে, সহকর্মী ও অধিনস্তদের কাজ নিজের মন মতো না হলে চিৎকার-চেঁচামেচি, বিভৎস চেহারা প্রদর্শন। এতে করে, মানুষ নিজের ও অপরের ক্ষতি করে ফেলে। যা সুসম্পর্কে ভাটা পড়ে। আশেপাশের মানুষের তিরস্কার ও ভৎসনা বাক্য শুনতে হয়। আর পরিণত হয় অপছন্দের পাত্রে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,'যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।

মানুষ রাগের মুহূর্তে খুব সহজ কাজ জটিল করে তোলে। ফলে ব্যক্তি পরক্ষণেই অনুশোচনায় কাতর হয়। কথায় আছে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচার অমঙ্গল ডেকে আনে। আর আত্মার নিয়ন্ত্রণ হারালে পথিকের ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ নিজেই সংকোচিত করে ফেলে। হারিস ইবনে ওয়াহাব রা. বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইমানদার ব্যক্তি সব সময় সুনিপুণ ও কুরআন ও হাদিসের ছোঁয়ায় জীবনাচরণ নম্র ও বিনয়ী হয়। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ইমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়। 

মানুষের বহু মন্দ স্বভাব রয়েছে, তার মধ্যে যে সব স্বভাব হৃদয়ে আঘাত করে। আল্লাহ তায়ালা থেকে বিমুখ করে দেয়। অতিরিক্ত কথা বলা, অহংকার, মিথ্যাচার করা, নেতিবাচক মনোভাব, কৃপণতা ও অপচয়, নেশা করা, অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া, মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ানো, পরনিন্দা, অতিমাত্রায় স্বার্থপর হওয়া, অল্পতে রেগে যাওয়া, সব কিছুতে একগুঁয়ে স্বভাব, কার মতের প্রধান্য না দেওয়া, হীনম্মন্যতা, খুঁতখুঁতে স্বভাব, কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণ, পরাজয় স্বীকার না করার মনোভাব, অল্পতে হতাশ হওয়া, সব কাজ একাই করার মনোভাব, কোন কাজে না বলতে না পারার স্বভাব, নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া, আত্মকেন্দ্রিক হওয়া, আয়ের চেয়ে অধিক ব্যয় করা, মানুষের প্রতি কুধারণা, গোয়েন্দাগিরি করা, খারাপ চিন্তা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়।

মানুষের অন্তরের পশুস্বভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে; আল্লাহ ভীতি অন্তরে সদা বিরাজমান রাখা এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে শিখা। পরিস্থিতি থেকে সরে আসা, ইসলামী জ্ঞানের আলোয়; জীবনকে আলোকিত করা। শয়তানের কুমন্ত্রণা, কু-বাসনা থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। মুমিন বান্দাদের সংস্পর্শে থাকা কেননা একজন মুমিন অপর মুমিনের আয়না স্বরূপ। আত্মসমালোচনা করা। নিয়মিত কিছু সময় ব্যায়াম করা। কঠিন রোগাক্রান্ত ও বিপদের ভারে নুয়ে পড়ছে এমন মানুষের দেখতে যাওয়া। মৃত্যুর কথা স্বরণ করা। ইয়াতিম ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো এর মাধ্যমে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়।

লেখক: তরুণ কলামিস্ট

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow