নালিতাবাড়ীর খ্রিস্টান পল্লীতে বড়দিনের উৎসবের আমেজ 

Dec 24, 2024 - 17:53
Dec 24, 2024 - 17:55
 0  27
নালিতাবাড়ীর খ্রিস্টান পল্লীতে বড়দিনের উৎসবের আমেজ 

তাওহিদুজ্জামান রোমান
বার্তা সম্পাদক, জনগণের কন্ঠ. কম

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে বিরাজ করছে এক আনন্দমুখর পরিবেশ। যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন (২৫ ডিসেম্বর) উদযাপনে গির্জাগুলোর পাশাপাশি প্রতিটি খ্রিস্টান পরিবার সজ্জিত হয়েছে রঙিন আলোয়। বিশেষভাবে, বারোমারী ধর্মপল্লীতে গোশালা তৈরি করে বড়দিন উদযাপন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলায় রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের তিনটি গির্জা এবং চার্চ অব বাংলাদেশের দুটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিজস্ব গির্জাগুলোতেও বড়দিন উপলক্ষে পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। শহরে কর্মরত অনেক খ্রিস্টান ব্যক্তি বড়দিনের ছুটিতে গ্রামে ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, আর শিশুরা নতুন পোশাক পরে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে।

গৃহকর্ত্রী সুজয়া নকরেক জানান, "আমরা ঘর সাজিয়েছি ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে এবং যীশুর জন্ম স্মরণে গোশালা তৈরি করেছি। আত্মীয়-স্বজনরা গ্রামে ফিরে এসে সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করছি।"

বারোমারী ধর্মপল্লীর ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন, "যীশু খ্রিস্ট বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আগমন শান্তি, ভালোবাসা ও মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। বড়দিন উদযাপন সেই বার্তাকে স্মরণ করার একটি বিশেষ উপলক্ষ, যা আমাদের জীবনে মানবিক মূল্যবোধ ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।"

চার্চ অব বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের পাদ্রি মৃদুল চাম্বুগং বলেন, "বড়দিন আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এই দিনে আমরা মানবতার সেবা ও বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করি। যীশু খ্রিস্টের জন্ম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধার গুরুত্ব কতটা অপরিহার্য।"

বারোমারী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কোপেন্দ্র নকরেক বলেন, "বড়দিন এমন একটি বিশেষ সময়, যা ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য এবং মানবিক মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে আমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।"

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লুইস নেংমিঞ্জা বলেন, "বড়দিন কেবল খ্রিস্টানদের উৎসব নয়, এটি একটি বিশ্বজনীন শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। আমাদের লক্ষ্য এই বার্তাটি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।"

বারোমারী প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুচিত্রা চিছাম বলেন, "বড়দিনের উৎসব আমাদের এলাকায় ধর্মীয় এবং সামাজিক ঐক্যের এক দৃষ্টান্ত তৈরি করে। এই দিনটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উদযাপন করার একটি সুযোগ প্রদান করে।"

বড়দিন উদযাপনকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, "বড়দিনে পটকা, আতশবাজি এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিবহনেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow