নদী নয়, যেন ধানক্ষেত—খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর বুকে সবুজ ধানের সমারোহ

Apr 20, 2025 - 20:12
 0  15
নদী নয়, যেন ধানক্ষেত—খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর বুকে সবুজ ধানের সমারোহ

তাওহিদুজ্জামান (রোমান)
শেরপুর জেলা প্রতিনিধি | জনগণের কন্ঠ 

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত, ভারত থেকে নেমে আসা খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীটি এখন নাব্যতা হারিয়ে প্রায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় প্রবল স্রোত আর শুকনো মৌসুমে নিস্তব্ধতা—এই বিপরীত রূপ নিয়ে বছরজুড়ে নদীটি বয়ে চলে। তবে গত তিন বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র—সবুজে ঘেরা বোরো ধানের সমারোহ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে চেল্লাখালী নদীর তীরবর্তী কয়েক শত পরিবারের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়ে তারা গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। তাদের অনেকেই পুনরায় বসতবাড়ি নির্মাণ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে সেই চেল্লাখালীর বুকেই দোল খাচ্ছে কৃষকের ঘামে ফলানো বোরো ধানের ক্ষেত। নদীর পলিমাটিতে আগাম জাতের উচ্চফলনশীল ধান রোপণ করে কৃষকেরা দিন গুনছেন সোনালি ফসল ঘরে তোলার আশায়।

স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে দুই-তিন মাস এই নদীতে পানি থাকে। বর্ষা শেষ হলে নদীটি শুকিয়ে যায়। তখন প্রান্তিক কৃষকরা বোরো আবাদের জন্য জায়গা প্রস্তুত করেন। এই নদীর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি, আন্ধারুপাড়া, বাতকুচি ও পলাশীকুড়া এলাকায় নদীর চরে চলতি বোরো মৌসুমে ১০-১৫ জন প্রান্তিক কৃষক প্রায় ১০-১২ একরের মতো জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।

বাতকুচি গ্রামের কৃষক আয়নাল হক (৪৮) বলেন, “এ বছর আমি নদীর চরে ১০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছি। সেচ না দিয়েই ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, বর্ষার ঢল আসার আগেই ফসল ঘরে তুলতে পারব।”

নামা বাতকুচি গ্রামের কৃষক কাবিল উদ্দিন (৩৯) বলেন, “আমরা যারা নদীর পাড়ে থাকি, সবাই নিজের বাড়ির সামনে নদীতে ধান চাষ করি। এতে খরচ কম হয়, ফলে লাভও ভালো হয়। টানা তিন বছর ধরে আমরা এভাবে চাষ করে আসছি। বর্ষা শুরু হলে একটু ভয় কাজ করে—তবে সময়মতো ধান কেটে নিতে পারলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।”

ভূমিহীন কৃষক নায়েব আলী (৬২) বলেন, “আমি ভূমিহীন মানুষ, বন বিভাগের জমিতে বসবাস করি। নদীর চরে চাষাবাদ করে কিছু ধান পাই—এটাই আমার খোরাক। চরাঞ্চলের জমিগুলো সমান নয়, তাই ছোট ছোট খণ্ডে ধান লাগাতে হয়। প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ ফলনের আশা করছি।”

নদীর পাড়ে বসবাসকারী কৃষাণী আবেদা খাতুন (৫৮) বলেন, “আমাদের বাড়ির বাইরে কোনো জমি নেই। নদীর পাড়েই থাকি, তাই নদীর চরে ধান আবাদ করি। অল্প খরচে ভালো ফলন হয়—সার ও বিষ তেমন লাগে না। যদি ঢল না আসে, তাহলে ঠিকমতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারব।”

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে কৃষকেরা নদীর চরে বোরো চাষ করেন। এতে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।”

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow