আত্মার অনুভূতিতে উদাসীন
আত্মহত্যা থেকে পরিত্রাণ
আত্মার অনুভূতিতে উদাসীন
মুহাম্মদ ইয়াছিন হোসাইন ফয়েজুন্নবী বিঃ
প্রঃ পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম
যতজন দুঃখে কষ্টে আত্মহত্যা করে নিজে থেকে পালিয়ে গিয়েছে, তারচেয়ে হাজারগুন বেশী মানুষ এখনো জীবন যুদ্ধে নির্বিক সাহসী সৈনিকের মত লড়ে যাচ্ছে।
নিজের ব্যাথা অনুভবে জীবিতের ছোঁয়া,অন্যের ব্যাথা অনুভবে মনুষ্যত্বের ছোঁয়া মিলে। আমার কাছে আমি আজো অপরিচিত।
দুনিয়ার কোন কিছুতেই এত গভীরে যাওয়া ঠিক নয়, যেখানে হারিয়ে গেলে ফিরে আসা কঠিন হয়।
এই দুনিয়ায় আমাদের আশা যাওয়া যার ইচ্ছায়, তাঁর সন্তুষ্টি ইচ্ছায় জীবন চালানো বুদ্ধিমানের কাজ। এই দুনিয়ায় একাকিত্বে সাথে ভালো বন্ধুত্ব করে রাখা ভালো। না পাওয়া নিয়ে যত আফসোস করি,পাওয়া সব জিনিসের যথাযথ গুরুত্ব কি দিতে পেরেছি।
আমরা আসলে কি চাই, মূলত কিসে আমাদের আসল সুখ শান্তি, আমরা নিজেরাই বুঝিনা জানিনা ।
আমরা বেশীরভাগ মানুষের দেহে পশুদের রাজত্ব বসবাস।হাজারো জনস্রোতের মাঝে মূলত আমরা সবাই একা ।
এই সত্যের সাথে যতদ্রুত মনকে বন্ধুত্ব করে নেওয়া যায়, ততই ভালো। বেশীরভাগ হাসির ময়নাতদন্ত করা গেলে
ফরেনসিক রিপোর্ট আসতো.....
হাসি ফরমালিন যুক্ত..।
নিজের মাঝে বিরাজিত পাপকে ঘৃণা করতে শুরু করুন, অন্তর মহলে মাওলার প্রেমের প্রশান্তির ছোঁয়া জাগ্রত হওয়া শুরু করবে।
ভুলের উপর বড় ভুল হল, ভুলকে ভুল না ভেবে প্রিয় ভাবা। দুনিয়ার জীবনে এমন কিছুই রাখতে নেই,যেইটা হারিয়ে গেলে আপনি নিজেই হারিয়ে যাবেন।
আসল সত্যিকারের ভালোবাসাতো মূলত সেইটা,যেইটা সৃষ্টিকর্তার সাথে হয়।
আমরাই মূলত আমাদের নিজেদের ধ্বংসের মূল কারন।
যে কষ্ট নিয়ে আজ ভাবছেন শেষ হবার নয়, তা ও একদিন সয়ে যাবে, আগের মত ব্যাথা আর লাগবে না। সময়ের স্রোতে ভেসে যাবে সব। এই পৃথিবীতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়, এমনকি এই পৃথিবী নিজেও।
আপনার যে বিনয়ী হওয়াটা অন্যদের চোখে দুর্বলতা বোকামি , আপনার রবের কাছে এই গুনটা বড্ড পছন্দের।
আমি এবং আমার এই দুই শব্দ থেকে নিজের মনকে মুক্ত করে নিতে হয়, যদি সুখ শান্তির সাথে সাক্ষাৎ করার প্রবল ইচ্ছে থাকে।
বেশীরভাগ সময়ই, আমরা নিজেরাই আমাদের নিজেদের উপর অনধিকার চর্চা করি।
কংকাল,কিডনি,চুল,চোখ ইত্যাদি সবকিছুরই তো একটা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
আচ্ছা একটা জীবন্ত মানুষের মূল্য কত...।
আচ্ছা আমাদের পরিচিত কতজন মৃত মানুষের কথা আমাদের মনে পড়ে, একদিন আমরা ও বিলিন হয়ে যাবো আমাদের আপন প্রিয় পরিচিতদের স্মৃতি থেকে। কবরটা যে কোথায় অনেকে সেটা ও জানবে না, খোঁজ ও নিবে না আর কোনদিন।
প্রতারকের জন্য চোখের পানি না ফেলে,
ওই আল্লাহর প্রেমে চোখের পানি ফেলুন, যিনি আপনাকে সবার চাইতে বেশী ভালোবাসেন।
আমরা যদি সত্যই সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়ার পাগল হতাম, তবে আমাদের চোখের পানিটা, অন্তরের হাহাকার টা আল্লাহ ও রাসুলের জন্যই অনুভব করতাম।
চায়ের দোকানের ১টি কাপের ও মূল্য আছে, ভেঙে গেলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যেতে হয়,
কিন্তু মানুষের মনের....।
চলুন এইবার ধর্মের পাতায় চোখ ঘুরাই । আমরা নিজের ক্ষোভে নিজেকে হারিয়ে যে ক্ষতি করি ইসলাম তাকে (ক্বতলুল আনফাস) আত্মহত্যা বলে।
আল্লাহর দেওয়া প্রাণ ও আয়ুষ্কাল অনেক বড় নেয়ামত যদি ও আমরা তা কম অনুভব করি। নেয়ামত ভূলে যখন নিজের ক্রোধের কাছে পরাজিত হই। ঠিক তখনই আমরা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হই। আমাদেরকে বিধাতা বানিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে অথচ আমরা নিজেরাই নিজের কাছে হেরে গিয়ে সর্বনিকৃষ্টের পরিচয় দেই।
ইসলাম মানব কল্যানে । তাই যারা সহজে পরাজয় বরন করে, হেরে যায়। তাদের স্থান ইসলামে নেই। না তাদের জন্য কোনো ক্ষমাকারী পাবে, না তাদের জন্য কোনো সুপারিশ কারী পাবে। যে নিজের ক্ষতি নিজে বেঁচে নেয়। তার জন্য কেইবা সাহায্য নিয়ে আসবে।
খুবই কম মানুষ নিজের মূল্য নিয়ে ভাবতে জানে। নির্বোধের কাছে নিজের মূল্য নেই। তাই সে নিজেকে নিয়ে ভাবতে চায় না। অকারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। তাদের জন্য সতর্কবার্তা। যেমন আল্লাহ বলেন,
"আমার বান্দাগন দুনিয়ার কোন অযাচিত কারনে নিজের ক্ষতি বা আত্মহননের পথ বেছে নিয়ো না"
সূরা নিসা আয়াত নং ২৯
আমরা যে কারণগুলোর জন্য অভিশপ্ত শয়তানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেকে তুচ্ছ মনে করি। মহামহীয়ান খোদা তাকে অযাচিত কারন বলেন। অর্থাৎ এই কারনগুলো সাময়িক অথবা যা সময়ের ব্যবধানে নিষ্প্রয়োজন। তিনি রাহীমা শব্দ দ্বারা বুঝাতে চান যে, বান্দা তোমার দুনিয়া আখেরাতের চাহিদা একমাত্র আমিই মিটাব ।
আল্লাহর দয়ার উপর যদি বান্দার ভরসা না থাকে। তবে সে শয়তানের খেলনার পুতুল। আল্লাহকে যে ভূলে যায় , আল্লাহ সে বান্দাকে ছেড়ে দেয়। তাই কুরাআনে ঘোষণা এসেছে ,
যে সীমালঙঘন করে নিজের উপর জুলুম করবে । আমি তাকে অচিরেই উত্তপ্ত আগুনে নিক্ষেপ করব। একদিকে সে দুনিয়া হারাল অন্য দিকে পরকাল।
যে বাঁচতে জানে সে কষ্ট উপভোগ করতে শিখে। নচেৎ সামান্য কষ্টে নিজের ক্ষতি করা বাতুলতা বৈ কি।
মানব দিশারী আঁকা কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উম্মত তোমার ঋন আমি পরিশোধ করব। ভরসা কর-তাওয়াক্কুল কর। ধৈর্য ধর।।
উম্মত যদি নবীর উপর বিশ্বাস নাই রাখে তবে সে বে-ইমান। আর ইমান ছাড়া মানুষ শয়তানের খড়ি। যে কোন মুহূর্তে শয়তানের ধোঁকা পড়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হযরত সাইয়েদুনাআবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ফাঁসি লাগিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করে জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপভাবে শাস্তি দিবে । আর যে ব্যক্তি বর্শা বিধিয়ে আত্মহত্যা করে জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে বর্শা বিধিয়ে শাস্তি দেবে। সহীহ বুখারী ।
ইসলাম আমাদের প্রতিনিয়ত একটাই মেসেজ দিচ্ছে। কল্যানের দিকে আস। আত্মহনন কল্যান নয় ইহা নিজের ক্ষতি , সমাজের ক্ষতি , দেশের ক্ষতি।
ড. আল্লামা ইকবাল রহ বলেন, "যে মরতে জানে সেই বাঁচে"
আত্মহত্যা মানুষের জীবনের গন্তব্য হতে পারে না। এটি কখনো ই সহজ সমাধান হতে পারে না। আত্মহত্যা জঘন্য অপরাধ। এ মহাপাপ সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতার শামিল
What's Your Reaction?