ফিরছে জামায়াত: কাঁপবে রাজনীতির মঞ্চ?

ফিরছে জামায়াত: কাঁপবে রাজনীতির মঞ্চ? __ ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে কি?

Apr 21, 2025 - 21:13
Apr 21, 2025 - 21:16
 0  10
ফিরছে জামায়াত: কাঁপবে রাজনীতির মঞ্চ?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনীতির গতিপথে অনেক দল এসেছে, গেছে—কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ছিল একটি ব্যতিক্রম। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন, যার শিকড় সমাজের বহুস্তরে ছড়িয়ে রয়েছে। ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিলের ফলে তারা নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে থাকলেও আদর্শিক, সাংগঠনিক ও চিন্তাগত পরিসরে সক্রিয়তা হারায়নি। আজ, যখন দলটি পুনরায় নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে, তখন অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন—জামায়াতের প্রত্যাবর্তন হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন ধারা সূচনার ইঙ্গিত।
ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠবে কি?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক ধরনের চরম মেরুকরণ চলছে। একদিকে যেমন ছিল ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের দীর্ঘকালীন একক আধিপত্য, অন্যদিকে আছে দুর্বল ও কোণঠাসা বিরোধী শক্তি। এই প্রেক্ষাপটে যদি জামায়াত নতুন রূপে, তরুণ নেতৃত্বে, আধুনিক রাজনীতির কৌশলে মাঠে নামে—তবে তারা শুধু বিকল্প নয়, বরং হতে পারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবর্তনের মূল চালক। তাদের "নৈতিক নেতৃত্ব", "পরিকল্পিত উন্নয়ন" ও "দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন" এর বার্তা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে। বর্তমান প্রজন্ম যেমন উন্নয়ন চায়, তেমনি চায় নৈতিকতা, আদর্শ ও নেতৃত্বে স্বচ্ছতা। জামায়াত সেই জায়গাগুলোতে আলো ফেলতে সক্ষম।
বাংলাদেশের উন্নয়নে জামায়াত: সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুঃ-
আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের পথে, কিন্তু পথটি কাঁটাযুক্ত। আমাদের সামনে জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সুশাসনের অভাব, এবং মেধা পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই সময় প্রয়োজন আদর্শিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব, যারা স্বপ্ন দেখাবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহসী পদক্ষেপ নেবে। জামায়াতে ইসলামীর "সাম্য-ন্যায়-শান্তি" ভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শন, দারিদ্র্য বিমোচনের সুসংগঠিত নীতি, শিক্ষার আধুনিকীকরণ, ও গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার ওপর জোর দেওয়া—এইসবই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, এবং নেতৃত্বে নিষ্ঠা—এই ত্রয়ীর সমন্বয় যদি কেউ ফিরিয়ে আনতে পারে, তবে জামায়াত সেই শক্তি হতে পারে।
তারুণ্যের আকর্ষণ ও আদর্শিক ভিত্তিঃ
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আদর্শিক রাজনীতিতে আগ্রহী, যারা শুধুমাত্র ভোটের সময় মুখোশ পরা রাজনীতিকদের দেখতে চায় না, বরং সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতামূলক নেতৃত্ব চায়। জামায়াতের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো, মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতি, ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। তারা ব্যক্তি গঠনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনের যে তত্ত্বে বিশ্বাস করে, তা এখনো সময়োপযোগী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের সক্রিয়তা ও তরুণ নেতৃত্বের অংশগ্রহণ জামায়াতকে এক নতুনভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেছে। তাদের ‘আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ ও ‘স্থানীয় বাস্তবতার সংমিশ্রণ’ একে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
সর্বোপরি, জামায়াতে ইসলামী যদি নিবন্ধন ফিরে পায়, তবে তা কেবল একটি দলের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন নয়, বরং হতে পারে বাংলাদেশে আদর্শনির্ভর রাজনীতির নবজাগরণ। এই জাতি আজও এমন এক নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে—যারা কথা নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেবে; যারা ক্ষমতার জন্য নয়, বরং জনগণের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে। যদি এই প্রত্যাশার বাস্তব রূপ দিতে কেউ সক্ষম হয়—তবে জামায়াত সে নামটি হতে পারে।
  Kazi Salman Hossain .
  University of Cyberjaya, Malaysia.

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow