সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার ১৩ লক্ষ টাকা নিয়ে লাপাত্তা আওয়ামিলীগ নেতা ও তার অনুসারীরা।
সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার ১৩ লক্ষ টাকার নেই।
সাভার প্রতিনীধি: সাভারে ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার গভনিংবডির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন চৌধুরি ও দু’জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের টাকা লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সূত্রমতে জনাযায়, দীর্ঘদিন ধরে ‘সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা’ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরী নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। আওয়ামীলিগ সরকারের দেশত্যাগের পর পালিয়ে আছে সেই ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরী। তখন তার দুই অনুসারী সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাইজুল ইসলামও আত্মগোপনে চলে যায়।
সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাবে এই মাদরাসায় একটানা তিন বার সভাপতি ছিলেন। তার ইশারাতেই চলতো সব। মাদরাসার অর্থনৈতিক বিষয় তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাদরাসার সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাইজুল ইসলাম আওয়ামীলীগ নেতার অনুসারী ছিল। আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ চৌধুরীর নির্দেশে শিক্ষক নিয়োগ নাসির উদ্দিনের মাধ্যমে হতো। তাইজুল ইসলামের কাছে থাকতো অর্থনৈতিক হিসাব। কিন্তু মাদ্রাসার সাড়ে ১২ লাখ টাকার হিসাবের কোন হদিস পাওয়া যায় না। হিসাব তারা বুঝিয়েও দেয়নি।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতা ও তার অনুসারী দুই শিক্ষকও আত্মগোপনে চলে যায়। ইতোমধ্যে শিক্ষক নাছির ও তাইজুলকে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গনমাধ্যমকে তাইজুল ইসলাম মুঠফোনে বলেন, আমি কাঠের পুতুল ছিলাম। আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ চৌধুরী আমাকে যে ভাবে বলতো সেই ভাবেই করতাম। আমার নিজস্ব কোন ক্ষমতা ছিল না। মাদরাসায় কেন যাচ্ছেন না জানতে চাইলে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেনে আসলে মাদরাসায় আসবো।
মাদরাসার সাবেক এক শিক্ষকের স্ত্রী খাদিজা আক্তার তার লিখিত অভিযোগে বলেছেন, তার স্বামী মোঃ আসাদুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তার স্বামী আসাদুলকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানে বাধাসৃষ্টি করে। পরে তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা অবৈধভাবে নিয়ে যোগদানের অনুমতি দেয়। এর কিছুদিন পর যখন আসাদুল বিএড স্কেল প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন তখন ওই শিক্ষক আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়। এদিকে টাকার শোকে মাদ্রাসায় অনুষ্ঠান চলাকালীন গত ২০১৮ সালের ১০মার্চ স্ট্রোক করে আসাদুল ইসলাম মারা যায়।
খাদিজা আক্তার বলেন, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর মাদরাসা থেকে বলেছিল পরিবারের খরচ ও ছেলের দায়িত্ব নিবে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ (মাসুদ চৌধুরী) নেতা ও তার অনুসারী শিক্ষকরা কেউ কোন খোঁজও নেয়নি।
এদিকে শিক্ষক বাবাকে প্রেসার দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদের বিচার দাবীতে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন মরহুম আসাদুল ইসলামের ছেলে আবরার বিন আসাদ।
সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক সহকারী মৌলভী আশরাফ লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে মাদরাসায় যোগদান করতে আসলে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ চৌধুরীর কথা বলে শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ মাদরাসায় যোগদানে বাধা প্রদান করে। যোগদান ও এমপিও বাবদ ৯০ হাজার টাকা জোড়পূর্বক নেয়। এছাড়াও নাসির উদ্দিন আহম্মেদ তার ৩০ মাসের বেতন না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। এই ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।
মাদ্রাসার সাবেক সহকারী গ্রন্থাগারিক একেএম ইউসুফ সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযেগে বলেছেন, তিনি প্রায় ৮ বছর মাদরাসায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর যখন তার নিয়োগ হয় তখন আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরীর অনুসারী নাসির উদ্দিন আহম্মেদ যোগদানে বাধা প্রদান করে। পরে দেড় লাখ টাকা নিয়ে যোগদান করতে দেয়।
তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করি তখন নাছির রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আবেদনটি সরিয়ে ফেলে এবং ঋণের প্রক্রিয়াবাবদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর সীল জাল করে আবেদনটি হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে আবেদনটি জাল প্রমাণিত হয়।
মোহাম্মদ আলমাস বিন আনোয়ার সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার যোগদানের সময়ও তার কাছ থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এবং এমপিও হওয়ার জন্য আরও দেড় লাখ টাকা দাবী করে আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী শিক্ষক নাছির উদ্দিন। টাকা না দেওয়ার তাকে হুমকি ধুমকি দিতে থাকে। এমনকি জঙ্গি আখ্যা দেয়। পরে জীবন রক্ষার্থে মাদরাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছেন বলে তিনি জানান। এখন তিনি তার হারানো চাকুরী ফিরে পাওয়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর আবেদন করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহম্মেদের সাথে মুঠফোনে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে দেন।
সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর মো. সালেহ আরও বলেন, সমস্ত অভিযোগের বিষয় তদন্তে গত ২ অক্টোবর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে সাভার ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার সভাপতি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে মাসুদ চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যার ঘটনায় একাধিক মামলায় আসামী হয়ে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
What's Your Reaction?