স্মরণে আছে কি?রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের কথা।।

মো:শাহিন/জনগনের কন্ঠ প্রতিনিধি।

Oct 28, 2024 - 19:54
Oct 28, 2024 - 19:57
 0  12
স্মরণে আছে কি?রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের কথা।।

জনগনের কণ্ঠ প্রতিনিধি:

 ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে জামায়াত-শিবিরের ছয় নেতাকর্মীকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন রাজপথে দিনভর ব্যাপক তা-ব চালায় আওয়ামী লীগ। রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার পর সেই লাশের ওপর নৃত্যের ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম নৃশংস ঘটনা, যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠে দেশে-বিদেশে। সেদিন বিষয়টি হঠাৎ করে ঘটেনি। আগেই লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে এসে প্রতিপক্ষকে দমনের ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কে এম হাসান যদি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয় তাহলে সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে লগি-বৈঠা হাতে ঢাকায় চলে আসে। সেদিন যা ঘটেছিল : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার তখন বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেদিন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের শপথ হওয়ার কথা ছিল। তিনি যেন শপথ নিতে না পারেন সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট তুমুল আন্দোলন করছিল। আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, কেএম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হলে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কে এম হাসান দায়িত্ব নেবেন না – এমন একটি গুঞ্জন আগেই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৭ অক্টোবর রাতে কেএম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কেএম হাসান এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেন যে, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সংলাপে কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেননি। বিচারপতি কেএম হাসান অপারগতা প্রকাশ করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করে। এমন অবস্থায় ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। পল্টন ময়দানে সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। পল্টন ময়দানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল শ্রমিক দলও। সংঘাতের আশঙ্কায় পল্টন ময়দান এবং আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এমন আশঙ্কার মধ্যেই পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সেদিন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র তুলে গুলি এবং লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াতে ইসলাম ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে মারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, যা গভীর আলোড়ন তৈরি করেছিল। ২৮ অক্টোবরের আগের দিন এবং পরের দিনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাত হয়েছিল। এসব ঘটনায় মামলা হলেও ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলা প্রত্যাহার করা হয়। জামায়াতের দাবি, সেদিনের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসন ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। তাই দিনব্যাপী চলে আওয়ামী লীগের তা-ব। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এটি ছিল স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের উত্থানের প্রথম মহড়া। সেদিনও বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। তবে সরকারের যে ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল তা তারা করেনি। বিএনপি নেতারা বলছেন, সেদিন জামায়াত-বিএনপির মধ্যে সমন্বয় থাকলে দিনভর তা-ব চালাতে পারত না আওয়ামী লীগ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী-এই দুটি মিলেই একটা বিরাট শক্তি। এরা একসাথে থাকলে বাকি সব দলকেও পরাজিত করা যায়। সেই ধরনের পরিকল্পনা ছিল না, সমন্বয়কও ছিল না। আর সেই সুযোগেই এই পরিস্থিতি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২৮ অক্টোবরের পথ ধরেই বাংলাদেশে সন্ত্রাসী রাজনীতি শুরু ও তা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অব্যাহত রেখেছিল। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। জনগণের দাবি, অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সচল করে খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার নির্মম আঘাতে নিহতদের স্মরণে এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানান জামায়াত আমির। বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সারা দেশে লগি-বৈঠার তা-ব সৃষ্টি করে। ওই দিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে জনসভার স্টেজ নির্মাণের কাজ চলছিল। হঠাৎ করে ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা গোটা পল্টন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর লগি-বৈঠা, লোহার রড ও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে শুরু করে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুরু হলে চারিদিক থেকে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে জামায়াতের সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন আমিরে জামায়াত ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। জনসভায় উপস্থিত জনগণ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর আঘাত করাই ছিল তাদের আসল লক্ষ্য। ঐ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন এলাকা লগি-বৈঠাধারীদের সন্ত্রাসী তা-বে এক রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়। তাদের হামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গোটা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃত মানুষের লাশের ওপর নৃত্য করে বর্বরভাবে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে; যা সারা বিশ্বের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ওই ঘটনা ছিলো পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা। বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সাথে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের রক্ষা করে। অন্যদিকে ২৮ অক্টোবর উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ পুরানা পল্টন থানার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন পুরানা পল্টন থানার আমির শাহিন আহমদ খান। মিছিলটি রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড় থেকে শুরু হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তার সঙ্গে দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

মো:শাহিন /জগনের কন্ঠ.কম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow