ফসল গেল, কী খাব এখন?—পাহাড়ি কৃষকের আহাজারি

তাওহিদুজ্জামান (রোমান)
শেরপুর জেলা প্রতিনিধি | জনগণের কণ্ঠ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় ফের বন্যহাতির হানা চালিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী খ্রিস্টান মিশনের ভেদরকোনা এলাকায় প্রায় ৪০-৫০টি বন্যহাতির একটি দল হানা দিয়ে কৃষকদের আধাপাকা বোরো ধান খেয়ে ও পায়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একাধিক কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, অনেকেই ঋণ করে ধান চাষ করেছিলেন। এখন সেই ফসল হারিয়ে তারা নিদারুণ আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
ভেদরকোনার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রসুল মাহমুদ বলেন, “ঋণ করে দেড় একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। রাতেই হাতির দল এসে সব ধান খেয়ে ও মাড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। মশাল জ্বালিয়ে চিৎকার করেও কিছু রক্ষা করতে পারিনি। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, বুঝে উঠতে পারছি না।”
স্থানীয় কৃষক—আবুল কাশেম, হানিফ মিয়া ও আক্কাস আলী জানান, “গারো পাহাড়ে হাতির উপদ্রব বহু পুরোনো। দিনে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা হাতির দল রাতে খাদ্যের খোঁজে খেতের দিকে নেমে আসে। ধান, কাঁঠাল, সবজি—সবকিছুই ধ্বংস করে চলে যায়। কখনো কখনো তারা বাড়িঘরেও হানা দেয়।”
স্থানীয় আদিবাসী কৃষক তরুণ ম্রং, সতেন হাগিদক ও বিকাশ সাংমা বলেন, “দুই যুগ ধরে আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি, কিন্তু প্রতিবারই হার মানতে হয়। আমাদের আর্থিক ক্ষতির কোনো সুরাহা হয় না। আমরা সরকারের কাছে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।”
এ বিষয়ে কৃষক নয়ন কোচ বলেন, “সরকার যদি হাতির চলাচল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কৃষকেরা প্রতিবছরই এই বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।”
মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া শেষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, “গারো পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডব একটি জাতীয় সমস্যা। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাছাড়া বন বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে এবং হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সচেতনতামূলক সভাও করা হচ্ছে।”
What's Your Reaction?






