গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে যুবক আহত, শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি

তাওহিদুজ্জামান রোমান
শেরপুর জেলা প্রতিনিধি | জনগণের কন্ঠ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম (মৃত)-এর পুত্র জমশেদুল ইসলাম ছোটন আজ সকালে বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে পোঁড়াগাও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। উল্লেখযোগ্য যে, এই পাহাড়ি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা ধান চাষ করে আসছেন। চাষাবাদ শুরুর পর থেকেই বন্য হাতির দল খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে এসে ধানক্ষেতে তাণ্ডব চালায়। বিশেষত, ধান পাক ধরার সময় হাতির উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বন্য হাতি নিয়মিতভাবে আক্রমণ করে আসছে। গতকাল রাতেও হাতির দল কৃষকদের ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। হাতির আক্রমণ থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে কৃষকরা সারা রাত পাহারা দেন এবং দিনের বেলাতেও মাঠে উপস্থিত থাকেন। আজ সকালে ভারত থেকে আসা একটি দল বন্য হাতি এসে ধানক্ষেতে তাণ্ডব চালায়। ধানক্ষেত রক্ষায় অনেক কৃষক ও যুবক হাতি তাড়ানোর জন্য এগিয়ে আসেন এবং এ সময় একটি হাতি ছোটনকে আক্রমণ করে, তাকে আহত করে। তার নাক ও মুখে রক্ত আসে। বর্তমানে তিনি শেরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ছোটনের বড় ভাই, পোঁড়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনছারুল ইসলাম (৫২) জানান, "আমাদের এই পাহাড়ি অঞ্চলে হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত দীর্ঘকাল ধরে চলেছে, যা এখনও সমাধান হয়নি। আমরা কৃষকরা ধান চাষ করি, আর হাতিরা এসে আমাদের ধান নষ্ট করে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে আমার ভাইও হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তার নাক ও মুখে রক্ত এসেছে। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।"
বাতকুচি গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান (৫৭) বলেন, "হাতির সঙ্গে আমাদের এই দ্বন্দ্ব বহু বছরের। আমরা যখন ধান চাষ করি, তখন হাতির দল এসে আমাদের ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। গত দুই দিন ধরে ৩৫-৪০টি হাতির দল আমাদের ধান ক্ষেত ধ্বংস করেছে। আজ সকালেও ছোটন আক্রমণের শিকার হয়েছে। আমরা এখন কী করবো? ক্ষেত রক্ষা করতে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আর আজকের ঘটনায় ছোটন গুরুতর আহত হয়েছে। আমরা একটি স্থায়ী সমাধান চাই।"
মধুটিলা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, "এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে, হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাতের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। আমরা দ্রুত একটি কার্যকর সমাধান বের করার জন্য কাজ করছি।"
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, হাতির আক্রমণ রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
What's Your Reaction?






