অর্থের লোভে বিবেক বিক্রি! ফেসবুকে হৃদয়ছোঁয়া বার্তা দিলেন এ্যাসিল্যান্ড আনিসুর রহমান

তাওহিদুজ্জামান (রোমান)
শেরপুর জেলা প্রতিনিধি | জনগণের কন্ঠ
"অর্থের লোভে বিবেক বিক্রি!" — গভীর মানবিক বেদনা ও প্রতিবাদের সাথে, নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই তীব্র বাক্য প্রকাশ করেছেন নালিতাবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুর রহমান। এটি ছিল তার উদ্বেগ এবং ক্ষোভের স্পষ্ট প্রকাশ, যা সমাজের অবক্ষয় ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতি তার কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে।
ঘটনাটি নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সুতানাল পুকুর সংলগ্ন ফসলি জমিতে। চারদিকে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। সেই মাঠে বালুর সন্ধান মেলে, আর মানুষরূপী কিছু প্রাণী, ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে শুরু করে দেয় অবৈধ বালু উত্তোলন। জমির মালিক নিজেই নিজের বিবেক বিক্রি করে দেয় বালুর লোভে।
বৈদ্যুতিক খুঁটিটি ছিল উচ্চভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের অংশ। বালু উত্তোলনের ফলে খুঁটির পাশেই সৃষ্টি হয় ৪০-৫০ ফুট গভীর গর্ত। আশপাশের মাটি সরে গিয়ে খুঁটির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি বা সামান্য ধাক্কায় খুঁটিটি ভেঙে পড়তে পারে।
ভেঙে পড়লে কী হবে?
শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে, নাকি আরও ভয়ংকর কিছু?
আনিসুর রহমান সতর্ক করে বলেন, বৃষ্টির সময় যদি খুঁটি পড়ে যায়, তবে চারপাশের ধানক্ষেতে জমে থাকা পানি বিদ্যুতায়িত হবে। তখন সেই পানিতে থাকা কৃষক, শ্রমিক বা শিশু—যারা মাঠে খেলছে বা কাজ করছে—তারা মুহূর্তেই প্রাণ হারাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, "এরূপ ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। প্রায়ই পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, বিদ্যুতায়িত হয়ে তাজা প্রাণ ঝরে পড়ার হৃদয়বিদারক সংবাদ।"
আনিসুর রহমান প্রশ্ন করেন, "মানুষের অবয়বধারী যারা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা একটিবারও কি ভাবে এসব কথা? অবৈধ কাজেরও তো একটা সীমা থাকা উচিত! আজ ফসলি জমি, কাল ঘরবাড়ি, পরশু রাস্তাঘাট—সবকিছু কি এভাবে শেষ হবে?"
আরও বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি লেখেন, "দুঃখের বিষয় হলো, এই বালু সন্ত্রাসীদের পক্ষে আবার সমাজের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি (!) সুপারিশ করতে আসেন। তারা বলেন, নিজেরা নাকি জড়িত না, শুধু রিকুয়েস্টে বলেছেন।"
তিনি প্রশ্ন তোলেন, "বালু সন্ত্রাসীরা কিভাবে আপনাকে সুপারিশ করার সুযোগ পায়? একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব হওয়া উচিত, এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, আইনের হাতে তুলে দেওয়া। অথচ অনেকেই উলটো এদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেন—এটা কীসের বার্তা দেয়?"
এই অভিযানে আনিসুর রহমান নিজে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ট্রাক, ১টি ভেকু এবং ১টি মিনি ড্রেজার জব্দ করা হয়। বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয় বৈদ্যুতিক খুঁটির বিপজ্জনক অবস্থার কথা।
তিনি আহ্বান জানান, "স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, প্রশাসনকে সহায়তা করুন। অন্যায়কারীদের পক্ষে সুপারিশ করবেন না। বিবেকটাকে জাগ্রত করুন।"
আনিসুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, "নালিতাবাড়ীতে বালুর প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। সকলের সহযোগিতায় আরও কমবে ইনশাআল্লাহ। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।"
What's Your Reaction?






