ধর্ষণের পর লঞ্চের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয় জোছনাকে

জনগনের কন্ঠ প্রতিনিধি :

Sep 27, 2024 - 14:59
 0  6
ধর্ষণের পর লঞ্চের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয় জোছনাকে

চরফ্যাশন প্রতিনিধি : ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীর মরদেহটির পরিচয় মেলেছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবার লাশটি আজ সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছেন। তবে ওই তরুণীর পরিবার দাবি করছে, ধর্ষণের পর লঞ্চের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয় জোসনাকে। তবে অভাবের সংসারে বিয়ে হওয়ায় পরকীয়া প্রেমের বলি হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে জোছনা নামের ১৬ বছর বয়সী এই তরুণীকে। এর আগে গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে চরফ্যাশনের মেঘনা নদীর প্রশান্তি পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে জোছনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও বিকেলের দিকে পরিবার মরদেহটি শনাক্ত করে। জোছনার বাড়ি চরফ্যাশনের এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সে ওই ওয়ার্ডের দিনমজুর জাহাঙ্গীর ও কুলসুম বেগমের বড় মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. রাকিবুল ইসলাম। জোছনার মা কুলসুম বেগম জানান, গেল ৬ মাস আগে একই উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাচালক রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে তার মেয়ে জোছনার বিয়ে হয়। বিয়ের ২ মাস পর শশুরবাড়ির লোকজন তাকে ঢাকার গাবতলিতে নিয়ে যায়। তবে রাকিবের সংসারে খুব অভাব ছিল। দিন এনে দিন খেতে তার সংসারে কষ্ট হতো। প্রায়ই জোছনা তার মাকে ফোন করে বলত, রাকিবের সংসারে সে খুব অভাবে আছে, কষ্টে আছে। গাবতলিতে যাওয়ার ১ মাস পর। মানিক নামের এক রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জোছনার। এরপর একাধিকবার গাবতলি থেকে মানিকের সঙ্গে সে পালিয়ে যায়। এসব ঘটনার কারনে জোছনাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় শশুরবাড়ির লোকজন। গেল দেড়মাস আগে ঢাকা থেকে সে গ্রামের বাড়িতে আসে। এখানে এসেও পরকীয়া প্রেমিক মানিকের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সবশেষ চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মানিক ঢাকা থেকে জোছনার গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনে আসে। এরপর সেখান থেকে জোছনাকে নিয়ে মানিক পালিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। কিন্তু, মানিক ঢাকা না গিয়ে একরাত চরফ্যাশনের একটি হোটেলে থাকে। পরদিন পুনরায় জোছনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায় মানিক। ঢাকায় গিয়ে মানিক জোছনার মাকে ফোন করে জানায়, তারা দু’জন সেখানে বিয়ে করেছেন। এরপর জোছনার মা মানিকের কাছে অনুনয়-বিনয় করলে ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে মানিক জোছনার মাকে ফোন করে জানায়, সদরঘাট থেকে জোছনা হারিয়ে গেছে। তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জোছনাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়েকে মানিক বিয়ে না করেই লঞ্চে ধর্ষণ করে লঞ্চের ছাদ থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে মানিক পালিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়ে জোছনার হত্যাকারীর বিচার চাই। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরো বলেন, মেয়েটি আমার খুব আদরের। দুই ভাইয়ের মধ্যে জোছনা বড়। আমার পরিবারটি দরিদ্র হওয়ার কারনে ১৬ বছর বয়সে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেই। বেশি ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে পারিনি। আমি এই শোক কিভাবে সইব? নিহত জোছনার স্বামী রাকিবুল ইসলাম জানান, খুব অল্প বয়সেই তিনি জোছনাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু, অভাবের সংসারে তিনি তাকে সুখে শান্তিতে রাখতে পারেননি। পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে সে আজ খুন হয়েছে। জোছনার পরকীয়া প্রেমিক মানিকের ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। জোছনার শাশুড়ী জানিয়েছেন, মানিকের বাড়িও ভোলায়। তবে ভোলার কোন জায়গায়, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এছাড়াও জোছনা এবং রাকিবের পরিবার মানিককে ভালোভাবে চিনে-জানে না। এদিকে বুধবার দুপুরের দিকে জোছনার লাশ উদ্ধার হওয়ার পর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ার কারনে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তার লাশের ছবি পোস্ট করেন।

আল-আমীন ফরাজি নামের এক ব্যক্তি জোছনার লাশের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, গতকালকে (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে চরফ্যাশন এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় এই মেয়েটাকে আমরা কর্ণফুলী-১২ লঞ্চে দেখেছি, হাউমাউ করতেছে। তখনো লঞ্চ সদরঘাটে। মেয়েটির সুন্দর চেহারা অথচ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। রাতে তাকে ৩ তলার সামনে নিয়ে গেছে একটি লোক। আজ দুপুরে ফেসবুকে দেখি অনেকেই পোস্ট করছে বেতুয়া এলাকায় একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। যখন এই ছবিটা দেখলাম। তখনই আমার মনে হলো এই মেয়েটাকে তো গতকাল রাতে কর্ণফুলী ১২ লঞ্চে দেখেছিলাম। আসলে কেমনে কী হয়েছে আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শরিফুল হক বলেন, ‘জোছনার মৃত্যুর বিষয়ে প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। যখন অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তখনও তার পরিচয় মেলেনি। বিকেলের দিকে জোছনার পরিবার চরফ্যাশন থানায় গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেছে। জোছনার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তার বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানতে পেরেছে। ঘটনাটি মর্মান্তিক উল্লেখ করে শরিফুল হক বলেন, এটি যদি হত্যা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই হত্যা মামলা হবে। পুলিশ ঘটনাটির বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

মো:শাহিন/জনগনের কণ্ঠ.কম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow