কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটিতে বেশি জোর দিতে হবে: বাকৃবি উপাচার্য
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১৮ মাঘ ১৪৩১ | ১ শা'বান ১৪৪৬
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, “পরিবেশের সাথে গবাদিপশুর সংখ্যা, উৎপাদনের গুণগত মান, রোগের প্রাদুর্ভাবের হার পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া খামারিদের দক্ষতা, মন- মানসিকতা, দক্ষতার অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে। খামারিরা পশুর লালন পালন ও চিকিৎসায় প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। চার দশক আগে খামার ও খামারিদের চিত্রের সাথে বর্তমান অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের মধ্যেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই মানসম্মত সেবা খামারিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ভেটেরিনারিয়ানদের অগিয়ে আসতে হবে। কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটিতে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে।”।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (বিএসভিইআর) ৩১তম বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাণীর স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
৫০০’র বেশি গবেষক, প্রাণী চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে ৯০টি মৌখিক এবং ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়।
উপাচার্য আরো বলেন, বিজ্ঞানের উদ্ভাবনগুলো যাতে শুধু কাগজ ও বই এর মধ্যে বন্দী না থাকে। যে উদ্ভাবনগুলো কৃষকের জন্য প্রয়োজনীয় সেগুলো সরাসরি ও দ্রুততম সময়ে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যাতে তারা উদ্ভাবনগুলো কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দেশের খামার ও খামারিদের পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখেই ভেটেরিনারিয়ানদের কাজ করতে হবে। দুই দশক আগের তুলনায় বর্তমানের ভেটেরিনারি পেশার চিত্রও পাল্টিয়েছে। তাই ভেটেরিনারিয়ানদের সবসময় শিখার আগ্রহ থাকতে হবে। মানসম্মত সেবা প্রদানের জন্য বিজ্ঞানের সর্বশেষ আপডেটের সাথে মিল রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোর্স কারিকুলামেও আপডেট আনতে হবে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিএসভিইআরের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, ইন্টার অ্যাগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ কে এম খশরুজ্জামান, দ্য ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশ ডিএআই গ্লোবাল এলএলসির টিম লিডার অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএসভিইআরের ৩১তম বার্ষিক সম্মেলন বিএসভিইআরের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা , ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুনসহ আয়োজক কমিটি ও কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, শুধু বাকৃবির জন্য নয় দেশের অন্যান্য ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের জন্যও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা আবশ্যক। যাতে তারা স্নাতক হওয়ার আগেই বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এছাড়া ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষকদেরও ব্যবহারিক ক্লাস নিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ে হাতে-কলমে শিখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাকৃবিতে অনেক গবেষক রয়েছেন, যারা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করছেন এবং নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করছেন। গুগলে সার্চ করলে প্রতিদিনই নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে দেখা যায়, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে গবেষণার অগ্রগতির জন্য আরও তহবিল প্রয়োজন। এজন্য দাতা সংস্থাগুলো, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
এসময় ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেছেন, বিএসভিইআর গবেষণার উন্নয়ন, নতুন ধারণার প্রচলন এবং লাভজনক উন্নয়নকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই উদ্যোগটি পশু চিকিৎসক এবং গবেষকদের সক্ষমতা বাড়িয়ে, টেকসই সমাধান প্রদান করে যা প্রাণী ও জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আমি বিভিন্ন খাত ও প্রতিষ্ঠান থেকে আসা বিশেষজ্ঞদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে আনন্দিত। এই বহুমুখী অংশগ্রহণ বিশ্ব স্বাস্থ্য পন্থার প্রতিফলন যা মানব, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আন্তঃসংযোগ সমাধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
What's Your Reaction?