নালিতাবাড়ীর জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সামেদুল ইসলাম তালুকদারের জন্মদিন আজ

তাওহিদুজ্জামান (রোমান)
শেরপুর জেলা প্রতিনিধি | জনগণের কণ্ঠ
আজ শুক্রবার, ৯ মে—নালিতাবাড়ী উপজেলার সাংবাদিকতা অঙ্গনের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব, দৈনিক ইত্তেফাকের উপজেলা প্রতিনিধি সামেদুল ইসলাম তালুকদারের জন্মদিন।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় সক্রিয় রয়েছেন সততা, দায়বদ্ধতা ও পেশাদারিত্বের আদর্শকে ধারণ করে। তার সুদীর্ঘ পথচলা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহে সীমাবদ্ধ নয়—তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার সাংবাদিকতা পরিমণ্ডলের একজন পথিকৃৎ, সংগঠক ও প্রেরণাদায়ী নাম।
১৯৮৮ সালে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক জাহান, সাপ্তাহিক জামালপুর বার্তা ও সাপ্তাহিক শেরপুর–এর মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন সামেদুল তালুকদার। এরপর ১৯৯১ সালে তিনি জাতীয় দৈনিক আজকের কাগজ-এ নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই সময় তার করা প্রথম প্রতিবেদন ছিল শহীদ মিনারের জরাজীর্ণ অবস্থা নিয়ে, যা তৎকালীন সময়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এরপর থেকে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন, অনুসন্ধান ও মতামতধর্মী লেখার মাধ্যমে তিনি নালিতাবাড়ীর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্থানীয় উন্নয়ন, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং অসাম্যের চিত্র তুলে ধরেন।
ছাত্রজীবনেও তিনি নেতৃত্বের গুণে ছিলেন অনন্য। ১৯৮৮ সালে গঠিত বর্তমান নাজমুল স্মৃতি সরকারি কলেজের প্রথম ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) হিসেবে নির্বাচিত হন। এই নেতৃত্বগুণই পরবর্তীতে তাকে সাংবাদিক সমাজের সংগঠক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রেসক্লাব নালিতাবাড়ীর সভাপতির দায়িত্ব তিনি বহু বছর আগেই পালন করেছেন। তার সময়ে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম ছিল সুসংগঠিত ও কার্যকর। তরুণ সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, অধিকার আদায়ে সম্মিলিত প্রয়াস এবং সমাজ সচেতন সাংবাদিকতার প্রসারে তিনি রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
অতীতের সোনালি স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সামেদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “১৯৮৮ সালের কথা। তখন আমি স্থানীয় কিছু পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতাম, এমনকি নিজের সম্পাদনায় একটি পত্রিকাও প্রকাশ করছিলাম। ঠিক সেই সময়েই নালিতাবাড়ীতে পত্রিকা পাঠের একটি অনন্য সংস্কৃতি গড়ে তোলেন সুশীল রায় নামের একজন ভদ্রলোক। তিনি ছিলেন এলাকার প্রথম পত্রিকা এজেন্ট। তার দোকানে নিয়মিতই বিভিন্ন জাতীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকা আসত, যা তিনি নিজে পাঠ করতেন এবং পাঠকদের জন্য রাখতেন। আমি এবং অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি তার দোকানে একত্র হয়ে পত্রিকা পড়তাম, সংবাদ নিয়ে আলোচনা করতাম, এমনকি মাঝে মাঝে তর্ক-বিতর্কও হতো।
পত্রিকা তখন ডাকযোগে আসত, প্রায় দুই-তিন দিন পর পৌঁছাতো। কিন্তু সেই প্রতীক্ষার মধ্যেই সংবাদ জানার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। সেই সময়টুকুই আমার মধ্যে সাংবাদিকতা নিয়ে এক গভীর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার বীজ বপন করে দেয়। বলতে গেলে, সুশীল রায়ের দোকান ছিল তখনকার নালিতাবাড়ীর ‘সংবাদ পাঠের আড্ডা কেন্দ্র’, আর সেই জায়গাটি থেকেই আমার সাংবাদিকতা যাত্রার ভিত শক্ত হয়।”
জন্মদিন উপলক্ষে সহকর্মী সাংবাদিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, “সামেদুল ইসলাম তালুকদার শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক নন—তিনি একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি, নির্ভীক অভিভাবক এবং সাংবাদিকতা জগতের অনুপ্রেরণার নাম।”
তার জন্মদিনে নালিতাবাড়ীবাসী ও শুভানুধ্যায়ীরা তার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও আরও সাফল্যমণ্ডিত জীবনের কামনা করেছেন।
What's Your Reaction?






