বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের পালস বুঝে : গয়েশ্বর
15/05/2025

আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন না হলে বিএনপি কি করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনগণের চোখ-মুখের ভাষা ও পালস বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর দল। একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘জুনে নির্বাচন হবে তার নিশ্চয়তা কী? নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিষয়ে এখনো সরকার জাতির সামনে কিছু পরিষ্কার করছে না। প্রধান উপদেষ্টা এক কথা বলেন, আর উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ও প্রেস সচিব বলেন আরেক কথা। কার কথা সঠিক- তা নিয়ে জনগণই বিপদে আছে।’
‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আবার অবিশ্বাস করলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তবে পারস্পরিক প্রেক্ষাপট, অবস্থান এবং জনগণের চোখ-মুখের ভাষা ও পালস বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি’-বলেন গয়েশ্বর রায়।
‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখন চরম পরীক্ষার মধ্যে রয়েছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওনার আগমনটা যেমন হয়েছে, প্রত্যাবর্তন যদি তেমন না হয়, তাহলে জাতির কী হবে?’
নির্বাচন নিয়ে তাঁর দলের প্রস্তুতি কেমন-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল না দেওয়ায় আমরা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াগত প্রস্তুতিতে যেতে পারছি না। ৩০০ আসনে যারা নির্বাচনে সহজে জয়লাভ করে বেরিয়ে আসতে পারবে, তাদের সিলেক্ট করাই বাকি রয়েছে। সারা দেশে বিএনপির কমপক্ষে ৩ হাজারের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মী বেশি, তাই প্রতিযোগিতা ও কোন্দলও বেশি। বিএনপি ভালো না মন্দ, তা বিচার করবে জনগণ।’
একক নাকি জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে বিএনপি-তাও স্পষ্ট করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘মূল অপজিশন (প্রতিদ্বন্দ্বী) দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জোটগতভাবে নির্বাচন করব- এই প্রতিশ্রুতি এখনই দিতে পারছি না। জোট হবে কি না, এটা ভাবার সময়ও আসেনি। কিন্তু বিএনপি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে তাহলে সবাইকে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করবে।’’
সংস্কার প্রশ্নে জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে বিএনপির মতানৈক্য সম্ভাব্য কি পরিণতি পেতে পারে-এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সবকিছু করতে হবে। ছাত্ররা নতুন দল এনসিপি গঠন করেছে, আন্দোলনে যথেষ্ট অবদান রেখেছে এবং সাপোর্টও পেয়েছে। তবে এটা ধরে রাখার দায়িত্বও তাদের। আন্দোলনের সময় লাখ লাখ লোক এসেছে, এখন তাদের মিটিং-মিছিলে কতজন আসে? তাদের ভাবতে হবে- একটা খেলায় জয়লাভ করেছে, তার মানে সব খেলায় জয়লাভ করবে তা কিন্তু নয়!’
প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের রসায়ন নিয়েও কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। বিএনপির সঙ্গে কোন দেশের কেমন সম্পর্ক সেটি ব্যাপার না। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো হলে জনগণ লাভবান হয়। বিএনপির ফরেন পলিসিতে বন্ধুত্ব সৃষ্টি ও রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। বিএনপি দেশ ও জাতীয় স্বার্থ সবার আগে দেখবে।’
‘তবে ভারত আমাদের সঙ্গে যতটা না কথা বলে, তার চেয়ে বেশি কথা বলে জামায়াতের সঙ্গে। গ্লোবাল পলিটিকসে কারও সঙ্গে শত্রুতা করে কোনো রাষ্ট্র সুবিধা করতে পারে না। সারা দেশের মানুষ ভারতবিরোধী হয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো রাষ্ট্র কৌশলগত কারণে কাউকে গুরুত্ব কম দেয়, আবার কাউকে বেশি দেয়’-যোগ করেন গয়েশ্বর রায়।
নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে একসময়ের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত প্রসঙ্গে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি, তাই ঢিলটা সবাই আমাদের দিকে বেশি মারে। নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সবার আলাদা কৌশল ও পথচলা ভিন্ন থাকবে স্বাভাবিক। তবে আমরা চেষ্টা করছি, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন পর্যন্ত জামায়াতসহ সবাইকে এক জায়গায় রাখার।’
বিভেদপূর্ণ রাজনীতি নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘যতটুকু ধৈর্য-কৌশল নিয়ে শেখ হাসিনাকে তাড়াতে সক্ষম হয়েছি, তার চেয়ে দ্বিগুণ ধৈর্য-কৌশল নিয়ে বাগযুদ্ধ বন্ধ করে গণতন্ত্র দাঁড় না করাতে পারলে সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যাবে’
What's Your Reaction?






