স্বাদের জাদুতে মাতোয়ারা বদলগাছী: হিরকের হোটেলের গরুর গোশত।

Jul 18, 2025 - 21:58
 0  6
স্বাদের জাদুতে মাতোয়ারা বদলগাছী: হিরকের হোটেলের গরুর গোশত।
1 / 1

1. স্বাদের জাদুতে মাতোয়ারা বদলগাছী: হিরকের হোটেলের গরুর গোশত।

 মাওলানা রেজাউল করিম  নওগাঁ 
জেলা প্রতিনিধি।

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা সদরের নতুন ব্রীজ সংলগ্ন একটি সাধারণ হোটেল। বাইরে থেকে দেখলে আর দশটা সাধারণ হোটেলের মতোই মনে হবে। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই নাকে ভেসে আসে মসলার মন মাতানো সুবাস, যা আপনাকে জানান দেবে—আপনি এক বিশেষ ঠিকানায় এসে পৌঁছেছেন। এটিই বিখ্যাত হিরকের হোটেল, যার গরুর গোশতের স্বাদ জয় করেছে হাজারো মানুষের মন।

হোটেলের হিরক বলেন প্রায় বেশ কয়েক বছর আগে ছোট্ট পরিসরে এই হোটেলটি শুরু করেন তিনি। প্রথম থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিলেন  সেরা মানের এবং সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা। নিজের একাগ্রতা, সততা আর রান্নার প্রতি ভালোবাসা দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করেন। এখন আর শুধু বদলগাছী নয়, নওগাঁ জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মানুষ ছুটে আসে গরুর মাংস খেতে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, হিরকের রান্নার বিশেষত্ব কী? এই বিষয়ে জানতে চাইলে হিরক হাসিমুখে বলেন, "বিশেষ কোনো জাদু নেই। মূল রহস্য হলো খাঁটি উপকরণ আর যত্ন।"
তিনি প্রতিদিন সকালে কসাইখানা থেকে নিজ হাতে পরীক্ষা করে সেরা মানের গরুর মাংস সংগ্রহ করেন। রান্নায় ব্যবহৃত হয় তাঁর নিজস্ব তৈরি এক বিশেষ মসলার মিশ্রণ। এই মসলার সঠিক অনুপাতই মাংসের স্বাদকে অনন্য করে তোলে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বড় ডেকচিতে দীর্ঘ সময় ধরে অল্প আঁচে রান্না করা হয় এই গোশত । ফলে গোশত হয় তুলতুলে নরম, যা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।

দুপুর হলেই হোটেলে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যায় না। সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ দিনমজুর—সবাই এক টেবিলে বসে উপভোগ করেন গরম ভাত আর ধোঁয়া ওঠা গরুর গোশতের ঝোল।

কথা হয় নওগাঁ শহর থেকে আসা এক চাকরিজীবী আজমল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, "আমি অফিসের কাজে প্রায়ই বদলগাছী আসি। এখানে এলে হিরকের হোটেলে গরুর গোশত না খেলে মনে হয় আসাই বৃথা। এমন স্বাদ আর কোথাও পাইনি।"

একইভাবে, স্থানীয় বাসিন্দা রনা জানান, "আমরা তো বটেই, বাড়িতে অতিথি এলেও অনেক সময় হিরক ভাইয়ের হোটেল থেকে গোশত নিয়ে যাই। এটা এখন বদলগাছীর একটা ঐতিহ্যের মতো হয়ে গেছে। শুধু হোটেল নয়, একটি ব্র্যান্ড
আজ হিরক ভাইয়ের হোটেল শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি বদলগাছীর একটি পরিচিতি বা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কোনো চাকচিক্য বা আধুনিক সাজসজ্জা ছাড়াই শুধু স্বাদের ওপর ভর করে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ এই হোটেল।

তাঁর নিরলস পরিশ্রম আর রান্নার প্রতি ভালোবাসা তাঁর হোটেলকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। ভোজনরসিকদের এই ভিড় প্রমাণ করে, ভালো খাবারের জন্য মানুষ যেকোনো দূরত্ব পাড়ি দিতে প্রস্তুত।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow