গারো পাহাড়
গারো পাহাড়
তাওহিদুজ্জামান রোমান (শেরপুর জেলা প্রতিনিধি)
গারো পাহাড় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বিস্তৃত একটি পর্বতশ্রেণি। মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতশ্রেণির একটি অংশ গারো পাহাড় নামে পরিচিত। এর কিছু অংশ রয়েছে ভারতের আসাম রাজ্যে ও বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলাগুলো এ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।
এটি পূর্ব গারো পাহাড়, পশ্চিম গারো পাহাড় ও দক্ষিণ গারো পাহাড় এই তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। গারো পাহাড়ের মোট আয়তন প্রায় আট হাজার ১৬৭ বর্গকিলোমিটার।
গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম নকরেক, যা ভারত অংশে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা চার হাজার ৬৫২ ফুট বা এক হাজার ৪০০ মিটার।
পাহাড়ের দীর্ঘতম নদী সিমসাং নকরেক থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং এ পাহাড়েই অবস্থিত। তবে গারো পাহাড়ের প্রধান শহর তুরা। এই শহরটি পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। তুরার জনসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। গারো পাহাড়ের অধিবাসীরা খুবই আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ। প্রকৃতির প্রতি তাদের রয়েছে বিশেষ মমত্ববোধ আর ভালোবাসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সম্পদ সংরক্ষণে তারা খুবই যত্নবান। তাদের জীবনধারা আর সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।
গারো পাহাড় বিশ্বের অন্যতম বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার আবহাওয়া, শান্ত সুন্দর পরিবেশ এবং মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
গারো পাহাড় জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বিল, হাওর, ঘন সবুজ বন এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ পাহাড়কে করেছে অনন্যবৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এই পাহাড়ে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এক বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণে মূল্যবান শালগাছ জন্মায়। এ ছাড়া বাকি অংশে সেগুন, শাল, বাঁশ, বেত প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। বনভূমিতে নানা প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, বন্য হাতি, হরিণ, বাঘ, বন্য শূকর, ময়না ও ধনেশ পাখি প্রচুর দেখা যায়। গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে শেরপুর জেলায় মনোমুগ্ধকর গজনী অবকাশ কেন্দ্র ও মধুটিলা ইকোপার্ক নামে দুটি পর্যটন বা পিকনিক স্পট রয়েছে।
What's Your Reaction?